শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫, ০২:৪৫ পূর্বাহ্ন

ঝিনাইদহের ফুল চাষীদের কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট

নয়ন খন্দকার, ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃঃ
বিশ্ব ভালবাসা দিবস ও একুশে ফেব্রুয়ারীকে ঘিরে ফুল পরিচর্যায় ব্যস্ত রয়েছেন ঝিনাইদহের ফুলচাষীরা। এসময় ফুলের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুন, লাভও হয় অনেক বেশী, তাইতো আশায় বুক বেধেছেন চাষীরা। তোড়জোড় চলছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে, ফুলের মান ভাল রাখতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে দেওয়া প্রতিবছর বসন্ত বরণ, ভালবাসা দিবস, বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষ, স্বাধীনতা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মতো দিনগুলোতে ফুলের অতিরিক্ত চাহিদা থাকে। আর এই চাহিদার সিংহভাগ যোগান দিয়ে থাকে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ফুল চাষিরা।
উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় ফুলের আবাদ হয়েছে ৩৫০ হেক্টর জমিতে। বিশেষ করে কালীগঞ্জ উপজেলার ১২টি গ্রামের ২৩৮ একর জমিতে এখন চাষ হচ্ছে গাঁদা, রজনীগন্ধ্যা, গোলাপ, জারবেরা ও গ্লাডিয়াসসহ নানা জাতের ফুল। মাঠের পর মাঠ হলুদ গাদা ফুলের দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। বিশ্ব ভালবাসা দিবস উপলক্ষে এ জেলার ফুলচাষীরা কয়েক কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট নিয়েছে।
এসব ফুল ক্ষেত থেকে সংগ্রহ ও মালা গাঁথা থেকে শুরু করে বিক্রি করা পর্যন্ত এই এলাকার মেয়েরা করে থাকে। ফলে পুরুষের পাশাপাশি মেয়েদেরও কর্মসংস্থান হচ্ছে। এ এলাকার উৎপাদিত ফুল প্রতিদিন দূরপাল্লার পরিবহনে চলে যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতে। জাতীয় ও বিশেষ দিনগুলো ছাড়াও সারাবছর এ অঞ্চলের উৎপাদিত ফুল সারাদেশের চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখে।
কথা হয় জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ছোট্ট একটি গ্রাম ডুমুর তলার চাষী মশিয়ার রহমানের সাথে। তিনি জানান, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ফুল চাষ দেখে তিনি কৃষি বিভাগের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে ২০ শতক জমিতে গাদা ফুল চাষ করেছেন। বাংলা আশ্বিন মাসে চারা লাগানোর পর ৩৫ থেকে ৪৫ দিনের মাথায় ফুল এসেছে। গত এক সপ্তাহে তিনি ১০ হাজার টাকা ফুলও বিক্রি করেছেন। সার, কীটনাশক, পরিচর্যা বাবদ তার খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকা। এই ২০ শতক জমি থেকে তিনি ৫০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান। এতে তার লাভ থাকবে ৪০ হাজার টাকা। এছাড়া এই গাছ যতœ করে রাখলে বিভিন্ন সময়ে ফুল তুলতে পারবেন। তিনি আরো জানান, দড়িতে ফুল গেথে ঝোপা তৈরি করা হয়। এক ঝোপায় সাড়ে ৬’শ থেকে ৭’শ গাদা ফুল থাকে। ফুলের মূল্য কম থাকলে এক ঝোপা বিক্রি হয় ৩০ টাকায়। দাম বাড়লে সর্বোচ্চ ৭শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারেন। আরেক চাষী মোহাম্মদ আলী জানান, তিনি আগাম গাদা ফুল চাষ করে মাত্র ১১ শতক জমি থেকে ৬০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেছেন। এছাড়া একই গ্রামের মহাসিন, আতিয়ার ও মিজানুর রহমানও তাদের জমিতে ফুল চাষ করেছেন।
ফুলনগরী বলে খ্যাত বড়ঘিঘাটি গ্রামের ফুলকন্যা নাজমা, নুরজাহান, স্বরসতী ও আয়েশা বেগম জানান, বছরের বারো মাসই ফুল তোলার কাজ করেন তারা। কিন্তু বিশেষ বিশেষ দিন সামনে রেখে কাজ বেশি করতে হয়। আয় উপার্জন ও বেশি হয়। তারা জানান, এখন ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে সকাল বিকাল কাজ করতে হচ্ছে। ব্যপারীরা ফুল নিতে ফুল মালিকের বাড়ি বসে থাকছে। যে কারণে সব কিছু রেখে সারাদিন ফুল তুলছেন তারা।
তারা আরও জানান, প্রতি ঝোপা ফুল তুলে গেঁথে দিলে ফুল মালিক ১০ টাকা করে দেয়। প্রতিদিন তারা ১২ থেকে ১৮ ঝোপা ফুল তুলতে পারে। অনেকে আবার স্থানীয় এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে একটি বাড়ির কাজ ও গৃহপালিত পশু কেনে। এরপর ফুলের কাজ করে কিস্তির টাকা পরিশোধ করি। এভাবেই এ এলাকার প্রায় প্রতি বাড়ির নারীরা এই কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। যে কারণে এই এলাকার মানুষ দিনে দিনে এখন বেশ স্বচ্ছল হয়ে উঠছেন।
উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান জানান, এ এলাকার জমিতে চাষ করা হয়েছে গ্লাডিয়াস, রজনীগন্ধ্যা গোলাপ, জারবেরা, গাঁদাসহ নানা জাতের ফুল। উৎপাদন ব্যয় কম, আবার লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরা ফুল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
এছাড়া কালীগঞ্জ উপজেলার কামালহাট, খড়িকাডাঙ্গা, দৌলতপুর, কাদিরডাঙ্গা, বিনোদপুর, খালকোলা, বালিয়াডাঙ্গা, দাদপুর, ধলা, গোপিনাথপুর, ডুমুরতলা,বালিয়াডাঙ্গা, তিল্লা, সিমলা, রোকনপুর, গোবরডাঙ্গা, পাতবিলা, পাইকপাড়া, তেলকূপ, গুটিয়ানী, সদর উপজেলার গান্নাসহ বিভিন্ন গ্রামের মাঠে ফুল চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি গাধা ফুল চাষ হয় কালীগঞ্জ উপজেলার কামালহাট গ্রামে।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল করিম বলেন, ফুলের মান ভাল রাখতে চাষীদেরকে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com